বিজ্ঞানবাদ, বুদ্ধি এবং গেঁয়ো ভূত


আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যে সমাজ আমাদের মৌলিক সহজাত প্রবৃত্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয় যেন আমরা একচেটিয়া ভাবে আমাদের ❝ বুদ্ধি❞ কে অনুসরণ করি। বস্তুবাদীদের মতে, এই বুদ্ধিকে শুধুমাত্র বস্তুবাদ, Scientism এবং যুক্তিবিদ্যার মধ্যেই কেবল খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অন্য কোথাও বুদ্ধিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোট কথা আমাদের 'মগজ বা বুদ্ধি'র উপর Scientism'র প্রভাবের কারণে Scientism যেটাকে ধ্রুব সত্য মনে করবে সেটাই আসল সত্য।


Scientism দ্বারা আমাদের শেখানো হয় যে, কোনো জিনিসকে (রূহানী টাইপ কিছু) যদি আমরা সরাসরি স্পর্শ বা অনুভব করতে না পারি, তখন সেই জিনিসটার কোনো ভিত্তি নেই। অর্থাৎ অদেখা জিনিসকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। সবকিছু সাবজেক্টিভ বেইসড Scientism'র আলোকে ভাবতে হবে। এমনকি কোনো জিনিসের ভিত্তি রূহানিয়্যাতের মধ্য থাকলেও সে জিনিসকে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ সেসবে ফেনাটিক'তা, সুপারস্টিশন রয়েছে (সাউন্ড হাইস্যকর)।


বস্তুবাদ সমাজের মতে, এই পৃথিবীকে জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও তার প্রায়োগিক দিক। অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই কেবল বুদ্ধিকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। তাদের মতে, বুদ্ধিকে বুঝার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হলো এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এগুলোর মাধ্যমেই কেবল পৃথিবীর মধ্যে থেকে রহস্য উন্মোচন করা যায় এবং সেসব আবিষ্কৃত রহস্যই হলো একমাত্র ধ্রুব সত্য। বাকি যা আছে সেগুলো সব মিথলজিক্যাল কথাবার্তা। 


এসব অদেখা মিথগুলো যারা বিশ্বাস করবে, তারা গেঁয়ো ভূত। অর্থাৎ বস্তুবাদ সমাজ Science এ নয়, Scientism এ বিশ্বাসী। এই পৃথিবীতে আমরা যা দেখি এবং যেসব জিনিসকে বাস্তবে ধরা যায়, ছোঁয়া যায় সেগুলোর বাহিরে যে আরও বহু সত্য থাকতে পারে সেটা মানতে না পারা মতবাদই হলো Scientism তথা বিজ্ঞানবাদ । 


বিজ্ঞানবাদীদের মতে, যারা পৃথিবীর রহস্য জানে এবং পাশাপাশি 'রুহানিয়্যাত তত্ত্বে' বিশ্বাস করে না তারাই একমাত্র "হোমো স্যাপিয়েন্স"। অর্থাৎ যারা কথিত কলাবিজ্ঞানকে ঔন করে, তারাই কেবল হোমো স্যাপিয়েন্স। বাকিরা অন্যান্য দ্বিতীয় স্তরের প্রাণিদের মতোই অ-ইন্টেলেকচুয়াল প্রজাতি, গেঁয়ো ভূত। অর্থাৎ তুমি প্রগতিশীল না হইয়া কেমনে হোমো স্যাপিয়েন্স হইবার স্বপ্ন দেখো মিয়া?


বস্তুবাদ বিজ্ঞান তথা Scientism'র বাহিরে যা কিছু আছে সবই ধর্মকেন্দ্রীক যুক্তিহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন "বুদ্ধি"। আমাদের নৈতিকতা, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি জিনিসগুলো জ্ঞানের আওতায় পড়ে না। যার জ্ঞান আছে সে কি এসব নৈতিকতা, মৈতিকতা'য় বিশ্বাস করতে পারে? না কখনোই না। যে করবে সে গেঁয়ো ভূত। ওয়েট তাহলে প্রগতিশীল কারা? যারা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত টপিকের উপরে বিশ্বাসী তারাই কেবল চেরাগায়িত মানুষ। চেরাগায়িত মানুষ ও নন-চেরাগায়িত মানুষকে 'দিন ও রাত' কনসেপ্টের মাধ্যমে পার্থক্য করা যায়। যারা চেরাগায়িত তারা 'দিন' আর যারা আমার মতো গেঁয়ো ভূত তারা 'রাত'। 


Gabor Mate একজন সমসাময়িক মনোবিজ্ঞানী। আমাদের বুদ্ধি বা তার বাহ্যিক রূপ 'জ্ঞান' থেকে 'অন্তর্দৃষ্টির' কৃত্রিম বিচ্ছেদের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সহজাত প্রবৃত্তি ও স্পিরিচুয়ালহীন অনুভূতিকে তিনি "নাড়িভুঁড়ির অনুভূতি " হিসেবে অভিহিত করেছেন। Mate সাহেব যুক্তি দেন যে "বুদ্ধি"কেবল সহজাত প্রবৃত্তি ও অনুভূতির উপরই নির্ভর করে। যখন আমাদের 'লজিক্যাল থট' থেকে অন্তর্দৃষ্টিকে আলাদা করা হয়, তখন সেই 'থট' পঙ্গুত্ব বরণ করে। কেননা 'অন্তর্দৃষ্টি' বিশ্বজগত ও আমাদের সম্পর্কে জানার জন্য জ্ঞানের অন্যতম একটি উৎস। যখন আমরা Scientism'র প্ররোচনায় নিজেদের ভেতরকার সহজাত প্রবৃত্তিকে বার বার দমন করার চেষ্টা করি, তখন আমরা সত্যিকারের নলেজ অর্জন করা থেকে ছিটকে পড়ি। 


জ্ঞানের অন্যতম উৎস যে 'অন্তর্দৃষ্টি তথা স্পিরিচুয়াল থট' হতে পারে যারা বস্তুবাদ বিজ্ঞানে বিশ্বাসী তারা এটা মানতে নারাজ। সেকুলারদের অনেকে ভাবে যে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও অন্তর্দৃষ্টি বিবর্তিত হয়েছ। ইসলামিকভাবে আমাদের এসব বিবর্তনের মার্কামারা এক্সপ্লানেশানের দরকার নেই। আমরা জানি যে, আল্লাহ সুবহানা ওয়া তাআ'লা মানুষকে শারীরিক ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন 'ইহকাল ও পরকালে' বেঁচে থাকার এবং উন্নতি করার জন্য। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা/খোরাক/Provision গুলো হলো পঞ্চ ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি এবং সহজাত প্রবৃত্তি। আর সকল সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল 'ফিতরাত'। 


||বিজ্ঞানবাদ, বুদ্ধি এবং গেঁয়ো ভূত||


অনুবাদ: তানভীর হায়দার 


তথ্যসূত্র: উস্তাযা উম্মে খালিদের লেখা থেকে

Post a Comment

0 Comments