জাদুবিদ্যা আমাদের দাজ্জালিক বিশ্বের সর্বত্রই রয়েছে। মূলধারার চলচ্চিত্রে'র চিত্রায়ণে থাকা সূক্ষ্ম চিহ্ন-প্রতীক ইত্যাদি থেকে শুরু করে সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ-গানের লিরিকস পর্যন্ত জাদুবিদ্যার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। ফাহিশা'হ ইন্ডাস্ট্রি'র এলিমেন্টস গুলোতে সর্বদা জাদুবিদ্যার প্রতীকি প্রসঙ্গ থাকে, যাকে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারি এভাবে, ❝ অবচেতনভাবে জাদুবিদ্যা'র এইসব চিহ্ন-প্রতীক দর্শকদেরকে কু ফু র ও শি রকের দিকে ধাবিত করে ❞
কিন্তু পশ্চিমা পপ-সংস্কৃতিতে থাকা জাদুবিদ্যা'র কথা যেভাবে অনেক বই এবং ডকুমেন্টারিতে এসেছে সেভাবে পপ-সংস্কৃতির আরেকটি ব্র্যান্ড দুনিয়া যেটিকে আমরা "The world of Japanese animes" বলতে পারি সেটি'র সম্পর্কে বইপত্র কিংবা ডকু'তে তেমন একটা আসেনি। এটিতে থাকা যাদুবিদ্যা'র চিহ্নগুলো কিভাবে যেন মানুষের মনোযোগ এড়াতে পেরেছে।
"Jap-anime" শিল্পের বর্তমান মূল্য প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এখন পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ঝুঁকছে। এটির জনপ্রিয়তা শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া সাই-ফাই মুভি আকিরা'র মাধ্যমে। পরবর্তীতে ড্রাগন বল এবং পোকেমনের হাত ধরে এর জনপ্রিয়তা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। বর্তমানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নেটফ্লিক্স এবং অ্যামাজন'র মতো প্রভাবশালী স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে "Jap-anime" তাদের নিজস্ব মূল জাপানি "প্রোডাকশনগুলি"'র দিকে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
জাপানী অ্যানিমে গুলো'র মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যানিমে হলো "Neon Genesis Evangelion "। এটি ২৬টি পর্ব সহ অক্টোবর ১৯৯৫ থেকে মার্চ ১৯৯৬ পর্যন্ত চলেছিল। আমরা বিশেষ করে Evangelion'র দিকে তাকাবো কারণ এটি সবচেয়ে সফল অ্যানিমে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রায় ১৬.৬ বিলিয়ন মার্কি ডলার উপার্জন করেছিল। আমরা এই অ্যানিমে'র কালচারাল লিগ্যাসি কিংবা পরবর্তীতে মুক্তি পাওয়া অ্যানিমেগুলোকে এটি কিভাবে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল সেজন্য এটিকে খন্ডন করবো না বরং এর এই অ্যানিমে'র মধ্যে থাকা কিছু রহস্যময় স্যাটানিক সাইন নিয়ে আলোচনা করবো। এই অ্যানিমে নিজেই সেমসয়ম "Neon Genesis Evangelion" টাইটেলে শুরু হয়েছিল। "Neon Genesis Evangelion" means “Gospel Of The New Century"-যা বাংলায় "নতুন শতাব্দীর গসপেল"
আমরা অবশ্যই 'Evangelion' অ্যানিমে'র গল্প কিংবা এর চরিত্রের বিশদভাবে বিবরণে যাব না। বরং আমাদের ফোকাস হল কীভাবে এই অ্যানিমে'তে গোপন স্যাটানিক চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল সেই দিকে। ট্র্যাডিশনাল ধর্মীয় চিহ্নগুলোর বিপরীতে ব্যবহার করা স্যাটানিক চিহ্নগুলো নিয়েই মূলত আমাদের আলোচনা।
কাব্বালা:
_______________
প্রতিটি অ্যানিমে'তে একটি "Opening Screen" থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে শুরু হওয়া "ওপেনিং স্ক্রিনে" প্রায় দুই মিনিট কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে অ্যানিমের বেশিরভাগ সারাংশ তুলে ধরা হয়। Evangelion'র ক্ষেত্রে শুরুতে দেখানো চিত্রগুলির মধ্যে আমরা তথাকথিত "Tree of Life" তথা "জীবনের বৃক্ষ" কনসেপ্ট দেখতে পাই। "জীবনের বৃক্ষ" হল একটি নকশা বা চিহ্ন যা কাব্বালা'য় ব্যবহৃত হতো। যা ইহুদি ধর্মের একটি রহস্যময় প্রথা।
কাব্বালাবাদীরা বলে যে, এটি আদম আলাইহিস সালামের কাহিনীতে উল্লেখিত বৃক্ষ যেটি 'জেনেসিস, ২:৯' এ বর্ণিত আছে। তবে এর কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ নেই। এই কাব্বালাবাদী বৃক্ষের দশটি গোলক বা সেফিরোট রয়েছে। যেগুলিকে ঈশ্বরের "গুণ" বা "উৎসর্গ" হিশেবে বিবেচনা করা হয়। এমনকি এগুলোকে তারা "আইন সোফ" বা অসীমও বলে থাকে। এই শ্রেণীকরণগুলো হলো একেকটি "উপায় বা মাধ্যম" যার দ্বারা ঈশ্বর পৃথিবীতে নিজেকে প্রকাশ করেন। একজন কাব্বালাবাদী বৃক্ষটিকে ভক্তি করার পাশাপাশি এর মাধ্যমে "ঈশ্বরের সাথে মিলনের" লক্ষ্যে আধ্যাত্মিকতা'র চর্চা করে।
ইহুদি পণ্ডিত জোসেফ ড্যান তার "কাব্বালা" বইয়ে উল্লেখ করেন যে এই বৃক্ষ এবং এর সাথে সম্পর্কিত "আধ্যাত্মিকতা" প্রাচীন ইহুদি ধর্মের কোনো উৎসে বর্ণনা করা হয়নি। বরং ১২ শতকের শেষের দিকে "Bahir" নামক একটি বইয়ে এর সম্পর্কে প্রথম বর্ণনা করা হয়।
জোসেফ ড্যান তার বইয়ের ২১-২২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
❝ কাব্বালার প্রাচীনতম রচনা হিসাবে "Bahir" গ্রন্থটিকে তিনটি প্রধান কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোনো ইহুদি উৎসে পাওয়া যায় না। প্রথমটি হল "দশটি হাইপোস্টেস" অর্থাৎ "দশটি ঐশ্বরিক শক্তির সমন্বয়ে ঐশ্বরিক জগতের বর্ণনা, যাকে বলা হয় মা'আমারোট" যা পরবর্তী কাব্বালাবাদ সম্পর্কিত লেখাগুলোতে "দশটি সেফিরোট" হিশেবে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয়টি হল "দশটি ঐশ্বরিক শক্তির মধ্যে একটিকে মেয়েলি হিশেবে চিহ্নিত করা", যেটি অন্য নয়টি থেকে আলাদা। এইভাবে ঐশ্বরিক রাজত্বে "Gender Dualism তথা লিঙ্গ দ্বৈতবাদ" প্রবর্তন করা হয়। অপরদিকে তৃতীয়টি হল "ঐশ্বরিক জগতকে একটি ইলান নামক বৃক্ষ হিশেবে বর্ণনা করা"; এইরকম পন্থা বলে যে, ঐশ্বরিক শক্তিগুলো একটি বৃক্ষের ডালের ন্যায় একে অপরের উপরে অবস্থান করে। একে দেখলে মনে হয়, "ছবিটি একটি উল্টোপাল্টা বৃক্ষ, যার উপরে শিকড় এবং শাখা ছিল" ❞
এই "লিঙ্গ দ্বৈতবাদ" আকর্ষণীয় কারণ কাব্বালা এর মাধ্যমে পূর্ণ। এমনকি এর 'তালমুদিক শিকড়' রয়েছে যেমনটি আমরা ৩০০-৫০০ খ্রিস্টাব্দের B’reshith Rabba 8:1-তে দেখতে পাই:
❝ আর' ইরমিয়াহু বেন ইলাজার বলেছেন: "যে সময়ে পবিত্র ব্যাক্তি (ঈশ্বর) প্রথম মানব সৃষ্টি করেছিলেন, সে সময়ে তিনি মানবকে এন্ড্রোজিন/এন্ড্রোজিনাস হিশেবে সৃষ্টি করেছিলেন। তাই বলা হয়, 'পুরুষ ও নারীকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।'" ❞
কাব্বালার আধুনিক বিশেষজ্ঞ গের্শোম স্কোলেম এই গুপ্ত ইহুদি স্কুল অব থটকে "এন্ড্রোজিনাস মিলন" অর্জনের উপায় হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন এই অর্থে যে কাব্বালাবাদীদের জন্য একজন ব্যক্তি রয়েছে যিনি "নিখুঁত আধ্যাত্মিক অবস্থায়" পৌঁছেছেন, যাকে "অ্যাডাম কদমন" বা আদিম আদম বলা হয়। আদম কোনো এক কারণে লিঙ্গহীন বা একই সময়ে উভয় লিঙ্গ, যার কারণে "জীবনের বৃক্ষ" Gender Dualism কে এভাবেই প্রতিফলিত করে।
এমনকি আমরা "জোহর 1:49b:7"-এ দেখতে পাই যে, তেরো শতাব্দীর 'কাব্বালার' গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা এই যে, ❝প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বদা বা একই সময়ে পুরুষ এবং মহিলা হতে হবে।❞ এমনকি Evangelion'র লিলিথ নামক চরিত্রের মধ্যে উপরে বর্ণিত "লিঙ্গ দ্বৈতবাদ" পাওয়া যায়। ইহুদি কাহিনীতে উল্লেখিত আছে যে লিলিথ আদম (আলাহি আসসালাম) এর প্রথম স্ত্রী ছিলো। কিন্তু তার অতি স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য স্বামী আদম (আলাইহি আসসালাম) তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অবশেষে তিনি লিলিথকে লা থি মে রে তাড়িয়ে দেয় ফলে লিলিথ দৈত্যের মতো আকৃতি ধারণ করে।
Evangelion-এ লিলিথ একটি অপরিহার্য চরিত্র যার সম্পর্কে আমরা এখানে বিশদভাবে বর্ণনা করবো না। লিলিথ এমন একটি বিশাল প্রাণী যার কোনো শনাক্তযোগ্য লিঙ্গ নেই। যাকে 'ঈসা ('আলাইহি আস'সালাম)-এর কথিত মিথ্যা ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার মতো করে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। ইহুদি ধর্ম জাপানে কার্যতভাবে অস্তিত্বহীন হওয়ার পরেও জাপানী অ্যানিমে'তে এই ধরনের কাব্বালবাদ চর্চা বেশ কৌতূহলপূর্ণ!
শয়তানী "দেবদূত" এবং ট্রান্সহিউম্যানিজম:
___________________________________________________
আমরা যদি ইভাঞ্জেলিয়ন'কে এক বাক্যে ব্যাখ্যা করি তবে তা হবে প্রায় এরকম, "এটি মানবতা, প্রতিনিধিত্বকারী "মেকাস"(giant humanoids) এবং গ্রহকে ধ্বংস করতে চাওয়া দেবদূতদের মধ্যেকার লড়াই সম্পর্কিত একটি অ্যনিমে।"
পশ্চিমা শিল্পে চিত্রিত দেবদূতদের মতো নৃতাত্ত্বিক চেহারা লিলিথদের মতো অ্যানিমে ক্যারেক্টারদের নেই তবে তারা বাইবেলে বর্ণিত কাহিনীরগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে কেমন যেন ঔন (own) করে। Ezekiel
নামক বইয়েও ব্যাপারটা লক্ষণীয়।
"শয়তানী দেবদূতদের" বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ জাতিসংঘের সাথে সংযুক্ত Nerv নামের একটি সামরিক সংস্থা দ্বারা করা হয়। এই সংস্থাটি যুদ্ধে "মেকাস" নিয়োগ করেছিল।
পরবর্তীতে জানা যায় যে, এটি আসলে একটি গোপন সংস্থা, যার নাম SEELE (জার্মান ভাষায় "আত্মা")। এটি আসলে একটি বিশ্বব্যাপী " World Order" বাস্তবায়ন করছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থাকে এটি ম্যানিউপুলেট করার চেষ্টা করছ।
গোপন সংস্থাটি এটিকে একটি ট্রান্সহিউম্যানিস্ট প্রোগ্রাম হিশেবে দেখাতে চায়। এই প্রোগ্রামের মধ্যে অন্তর্গত প্রজেক্টটির নাম হলো "মানব ইন্সট্রুমেন্টালিটি প্রজেক্ট।" এই প্রজেক্টটির উদ্দেশ্য হলো, ❝ এটি সমস্ত মানবতার আত্মাকে একক সত্তায় একত্রিত করতে চায়, যেন এটি মানব সত্তার ব্যক্তিগত সকল বেদনা এবং দুঃখকে মুছে দিতে পারে। এর মাধ্যমে একজন মানুষ কখনোই আর অহংকারী হিশেবে বাঁচবে না বরং বাঁচবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা হিশেবে। যে সত্তা কখনোই অহংকারত্বে ভুগবেনা। ❞
আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইভাঞ্জেলিয়ন'কে প্রথম "অস্তিত্ববাদী" অ্যানিমে হিসাবে বিবেচনা করা হয় এই অর্থে যে, এটি এমন একটি অ্যানিমে যা একাকীত্ব, বিষণ্নতা, বন্ধুত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলোকে চিত্রিত করেছে।
তাই যখন কেউ অ্যানিমে দেখে এবং উপরিউক্ত ট্রান্সহিউম্যানিস্ট প্রজেক্ট সম্পর্কে শোনে, তখন তার কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হয়ে উঠে।
তবে আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এই ধরনের ব্লকবাস্টার জাপানি অ্যানিমে কাব্বালাবাদী থিম, শয়তানী দেবদূত এর মতো ❝ গুপ্ত আধ্যাত্মিক রহস্যময় ধারণা সম্পন্ন একটি ট্রান্সহিউম্যানিস্ট প্রকল্পকে ❞ একত্রিত করছে। কিন্তু কেন? আমরা ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞান এবং এর "ইডিপাস কমপ্লেক্স" বা জ্যাঙ্গিয়ান মনোবিজ্ঞানের মতো আরও অনেকগুলি পয়েন্ট যুক্ত করতে পারতাম যা "The New Age" 'র জন্য বাছাই করা হয়েছে।
কিন্তু মনে রাখা উচিত! জাপান 'সভ্যতার' দৃষ্টিকোণ থেকে Jap-anime ইন্ড্রাস্টির প্রভাবের প্রতি উদ্বিগ্ন না হওয়া সত্ত্বেও আমরা অ্যানিমে শিল্পে উপরিউক্ত কাব্বালাবাদী থিম খুঁজে পেয়েছি। যা প্রতিনিয়ত নব্য উদার বিশ্বায়নের (The Neo-liberal Globalization) মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং এর থিমগুলোর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে। Jap-anime কে খন্ডন করে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পশ্চিমা পপ-সংস্কৃতি একাকী জাদুবিদ্যায় আক্রান্ত নয় বরং Jap-anime ইন্ডাস্ট্রিও আক্রান্ত! এই অ্যানিমে ইন্ডাস্ট্রি পশ্চিম থেকে স্টোরি, চিহ্ন আমদানি করে হাজার হাজার মুসলিম যুবক-যুবতীদেরকে তাদের অজান্তেই কাব্বালাবাদী স্যাটানিক থিমগুলোর সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে!
তর্জমায়: তানভীর হায়দার


0 Comments